সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পটুয়াখালী জেলাধীন গলাচিপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ জনে শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ২৪শের ছাত্র-জনতা ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই, উপদেষ্টা ফওজুল কবীর খান চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা মিঠামইন হাওরে ৫০ একর বোরো জমিতে সমালয় চাষাবাদ অষ্টগ্রামে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনে সভাপতি জাকির হোসেন মুকুল ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঔষধ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন বিএনপির শ্রদ্ধা ও র্্যালি জামায়াতে ইসলামী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং (মহান বিজয় দিবস) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

কনকনে শীতে বিপাকে হাওরের কৃষকরা

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৩ বার পঠিত

বিজয় কর রতন, মিঠামইন কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:-

শীত উপেক্ষা করে কৃষক জমিতে ছুটছেন। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে কিশোরগঞ্জ হাওরের কৃষকরা। এখন হাওরে চলছে ইরি-বোরো ধান রোপণের গুরুত্বপূর্ণ সময়। চারদিকে কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় ধানের জমিতে কাজ করতে পারছেন না চাষি।সকাল-দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জমিতে কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জ ইটনা উপজেলায় ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে বুধবার বার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিশোরগঞ্জ জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিএম মো. আলতাফ হোসেন বিষয়টি এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন। হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পুরো হাওর অঞ্চল। লাইট জ্বালিয়ে অটোরিকশাগুলো চলছে। ঘন কুয়াশা ভেদ করে কৃষকরা ছুটছেন জমিতে। তীব্র কনকনে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই শীতে বিশেষ করে বেশি অসুস্থ হচ্ছে বাচ্চা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা। দিন ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষ। বিকালে শীতের তীব্রতা বেড়ে তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন। ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার। ইটনা সদর ইউনিয়নের পশ্চিম হাওরে কৃষক ফাজিল মিয়া জানান, প্রচুর ঠান্ডা এবং কুয়াশা পড়ছে। এখন তো চিন্তায় আছি বেশি কুয়াশা পড়লে ধানের জমিতে পোকামাকড় আক্রমণ হবে। এ জন্য সকাল সকাল ধানের চারার উপর পড়া কুয়াশার পানিগুলো ফেলতে হচ্ছে। কৃষি শ্রমিক হামজা হোসেন বলেন, অনেক ঠান্ডা পড়েছে, পানি হিমশীতল হয়ে থাকে, কাজ করতে খুব সমস্যা হয়। হাওরে এখনই যেভাবে ঠান্ডা পড়েছে- এইভাবে চলতে থাকলে ধানের জমির ক্ষতি হবে। অটোরিকশাচালক ও মোটরসাইকেলচালকরা জানান, ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে অটোরিকশাচালক ও মোটরসাইকেলচালকরা। ঘন কুয়াশা ভেদ করে গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। আগের মতো যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। অটোরিকশা চালক ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা গরিব মানুষ গাড়ি চালিয়ে খাই, এখন ঠান্ডার মধ্যে গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে, আবার যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার যদি ড্রাইভারদের কিছু শীতের কম্বল দিত তাহলে উপকার হতো। মোটরসাইকেল চালক হাবিব মিয়া বলেন, সকাল থেকে বসে আছি কোনো যাত্রী আসেনি। ঠান্ডার মধ্যে গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়, এত কুয়াশা পড়ছে যে লাইট জ্বালিয়েও সামনে কিছু দেখা যায় না। হঠাৎ করেই শীতের ঠান্ডা পড়েছে, যা আমাদের জন্য কষ্টকর। ইটনা বড় বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল মিয়া বলেন, ঘনকুয়াশা আর শীতের তাপমাত্রা অনেক। এই শীত গরিব অসহায় মানুষের জন্য কষ্টকর। সরকারিভাবে গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে শীতের কম্বল বিতরণ করা খুব জরুরি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ উজ্জ্বল শাহা এ প্রতিনিধিকে জানান, হাওরে চলছে ইরি-বোরো ধানের জমি তৈরির প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে শতভাগ ইরি-বোরো ধানের বীজতলা সম্পন্ন হয়েছে। যদি এমনভাবে তাপমাত্রা নিচে নেমে আসে তাহলে ধানের চারায় সমস্যা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, হাওরে দিন দিনই তাপমাত্রা নিচে নামছে। আমাদের কৃষি উপসহকারীদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি এত ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডার মধ্যে জমিতে ধানের বীজ বপন না করার জন্য এবং ধানের বীজতলায় ৩-৫ ইঞ্চি পানি ধরে রাখার জন্য। সম্ভব হলে বীজতলা স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখার জন্য। এছাড়াও যদি দেখা যায় বোরো ধানের বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে শতাংশপ্রতি ২৫০-৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করবে। চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ২৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মৌসুমে ছিল ২৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর। কিশোরগঞ্জ জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিএম মো. আলতাফ হোসেন এ প্রতিনিধিকে জানান, বুধবার হাওর অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ বুধবার হাওর অঞ্চলে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে।

বার্তা প্রেরক
বিজয় কর রতন
মিঠামইন কিশোরগঞ্জ

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডি দিবস অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশাল ট্র্যজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নরসিংদীর ঘোড়াশালে আটিয়াগাঁও গ্রামে একই বাড়িতে শিশুসহ ১৮ নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের সকল ঘর-বাড়ি। নির্মম হত্যাযজ্ঞে গ্রামের শিশুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন নারী পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। এই দিনটি আসলে এলাকার মানুষ আজও আৎকে উঠে সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ৯ দিন পূর্বে দেশজুড়ে যখন কোণঠাসা পশ্চিমা হানাদার বাহিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াশালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিকামী বাঙালীর। বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানীরা ফিরে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশালের আটিয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানিরা আবুল কাসেমের বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা ৪ মাসের শিশু আয়শাসহ হত্যা করা হয় মোকছেদ আলী, মালাবক্স, শাহাজাহান, রহম আলী, আঃ হেকিম, হযরত আলী, আম্বিয়া খাতুন, মজিদা, শাহাজউদ্দিন, নেহাজউদ্দিন ও নেজু সহ প্রায় ১৮ নর-নারীকে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। এভাবে শুধুমাত্র আটিয়াগাঁও গ্রামেই ২৫ থেকে ৩০ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয় আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। হত্যাযজ্ঞের পরের দিনে তাদের অনেককেই গণকবর হিসেবে মাটি দেয়া হয়। সেই গণকবরগুলো আজ অরক্ষিত ঝোপঝাড়ে পরিণত। সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের খাতায়ও তাদের নাম আছে কিনা কেউ জানে না। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় শহীদের প্রতি পরিবারের জন্য দেয়া দুই হাজার করে টাকা দেয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি । সরকারের পক্ষ থেকে আটিয়াগাঁও এলাকার শহীদ হযরত আলীর ছেলে মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীরা আমার বাবা, দাদী ও ফফুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নি:স্ব করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের চলার মতো তেমন কিছুই ছিলনা। আশপাশের গ্রামের লোকজন আমাদের চলার পথে সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’  এছাড়া শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা তাও জানেনা তারা।  একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্তার বাবুল জানান, পাক বাহিনীরা এই এলাকায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের ঘরে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যরা ৪ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে কয়েকজন বাড়ির পাশে গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থেকে কোনক্রমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষা পায়।   আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাহাতুন বেগম জানান, তখন অগ্রহায়ন মাস বাড়ির পাশেই ধানের কাজ করছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। আর গুলি করে হত্যা করে যাকে সামনে পায়। পরে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এখানে এখন ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার শহীদদের গণকবরস্থানে বধ্যভূমি নির্মাণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর সহায়তায় সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় ঘোড়াশাল পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভূইয়া। ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারেরগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বধ্যভূমি নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান এলাকাবাসী। বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়ে আজ এলাকাবাসীর দাবি হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের তালিকা প্রনয়ন, গণকবর তৈরী করে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া অরবিন্দ রায় ০১৯১৮৭৬৭৬৫৫