রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ২৪শের ছাত্র-জনতা ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই, উপদেষ্টা ফওজুল কবীর খান চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা মিঠামইন হাওরে ৫০ একর বোরো জমিতে সমালয় চাষাবাদ অষ্টগ্রামে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনে সভাপতি জাকির হোসেন মুকুল ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঔষধ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন বিএনপির শ্রদ্ধা ও র্্যালি জামায়াতে ইসলামী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং (মহান বিজয় দিবস) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন প্রেসক্লাবের শ্রদ্ধা বকশীগঞ্জে গ্রাম পুলিশদের মাঝে শীত বস্র বিতরণ

চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা

  • আপডেট সময় : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪ বার পঠিত

মোঃ মিজানুর রহমান(চরফ্যাশন প্রতিনিধি)

চরফ্যাশন উপজেলায় রয়েছে একাধিক বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। এসব চরের খাল বিল ও জলাশয়ের পাশেই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে শতশত হোগলা পাতার বাগান। এসব চরের মধ্যে রয়েছে কুকরি-মুকরি,ঢালচর,চর নিজাম,সারসা চর, চর রঙ্গিলা,চর এলিন,চর পিয়ালসহ মূল ভূখণ্ডের নদী ও খালের কিনারার বিস্তৃত এলাকায় হোগলা পাতার বন। এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের পাশাপাশি নদী ও খালে মাছ ধরে সংসার চালান। তবে এসকল পরিবারের নারীরা আয়ের একটি বাড়তি উপার্জনের চাকা ঘুরাচ্ছেন হোগলা পাতায় দড়ি বুনে। চরে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরি করে ক্ষুদ্র শিল্পের কাচামালের যোগান দিচ্ছেন এসব নারীরা।
হোগলা পাতা দিয়ে মুড়িয়ে মুড়িয়ে দড়ি তৈরি করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এসব দড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় নানান ধরনের ক্ষুদ্র পণ্য। পাপস, মোড়া, চেয়ার, কলস, জগ, ব্যাগসহ বিভিন্ন রকমের শো-পিস। যা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রায় লাভবান হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
দড়ি বানানোর পাশাপাশি নিজেরাও হোগলা (মাদুর) নামাজের ছোটো মছলা (ছোটো মাদুর)। যা বিক্রি করে স্বাবলম্বি হচ্ছে দরিদ্র পপরিবারগুলো।
হোগলা পাতায় দড়ি তৈরির বিষয় নিয়ে চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের বাসিন্দা বিবি নুরজাহান (৪৬) করিমুননেছা (৪০) চর নিজামের বাসিন্দা সিবা রানি মন্ডল (৩৮) মালতি রানি মন্ডল (৩৯) ও রফিকউল্লাহ মিয়া (৪৫) এদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা এনে তারা নিজেরাই পাতা দিয়ে দড়ি বা রশি তৈরি করেন। ১০০ হাত দড়ি ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে সাভার,গাজীপুর ও উত্তরা এলাকায় পাইকারের মাধ্যমে সাপ্লাই করেন তারা। পাইকারি মূল্যে বিক্রি করেও ভালো লাভবান হচ্ছেন এসব পরিবার। নিজেদের পাশাপাশি শ্রমিকদেরকেও প্রডাকশনে দড়ি বোনার কাজ দিচ্ছেন অনেকেই। সিবা রানি বলেন, আমি এবং আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ে নিয়ে এসব দড়ি বানাই। তবে কোনো সংস্থা যদি আমাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেয় তাহলে আমরা নিজেরাই হোগলা পাতা দিয়ে আসবাবপত্র বানাতে পারতাম। আমরা জানিনা কিভাবে তা বানাতে হয়।
হোগলা ও মছলা (মাদুর) ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন,চরের গেরস্তের কাছ থেকে পাইকারি কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করি। ভালো আয় হয়। শীতে ঘরের মেঝে ঠান্ডা থাকায় অনেকেই হোগলার মাদুর কেনেন তাই ব্যবসাও এখন চাঙ্গা।
ঢাকার একজন পাইকারী ক্রেতা সুমন মজুমদারের সঙ্গে আলাপ করলে জানান, তিনি চরফ্যাশনসহ ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হোগলা পাতায় বোনা দড়ি পাইকারি ক্রয় করে তা আবার অধিক মুনাফায় ঢাকা সিলেট চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। এই পাইকারের সূত্র ধরে সাভার নবীনগরের উদ্যোক্তা নাজনীন সুলতানার (২৬) সাথে কথা হয়। এই নারী উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ও তার মা সুলতানা বিনতে ইয়াসমিন (৪৩) একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মাধ্যমে হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র বানান যা বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। তার এই তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও চরের এসব হোগলা পাতায় তৈরি পণ্য রাজধানীর বিভিন্ন মেলাতেও বিক্রি করেন তিনি।

ছবি ক্যাপশন: চরফ্যাশন থেকে হোগলা পাতায় বোনা দড়ি গাড়িতে লোড করছেন পাইকাররা।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডি দিবস অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশাল ট্র্যজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নরসিংদীর ঘোড়াশালে আটিয়াগাঁও গ্রামে একই বাড়িতে শিশুসহ ১৮ নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের সকল ঘর-বাড়ি। নির্মম হত্যাযজ্ঞে গ্রামের শিশুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন নারী পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। এই দিনটি আসলে এলাকার মানুষ আজও আৎকে উঠে সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ৯ দিন পূর্বে দেশজুড়ে যখন কোণঠাসা পশ্চিমা হানাদার বাহিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াশালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিকামী বাঙালীর। বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানীরা ফিরে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশালের আটিয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানিরা আবুল কাসেমের বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা ৪ মাসের শিশু আয়শাসহ হত্যা করা হয় মোকছেদ আলী, মালাবক্স, শাহাজাহান, রহম আলী, আঃ হেকিম, হযরত আলী, আম্বিয়া খাতুন, মজিদা, শাহাজউদ্দিন, নেহাজউদ্দিন ও নেজু সহ প্রায় ১৮ নর-নারীকে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। এভাবে শুধুমাত্র আটিয়াগাঁও গ্রামেই ২৫ থেকে ৩০ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয় আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। হত্যাযজ্ঞের পরের দিনে তাদের অনেককেই গণকবর হিসেবে মাটি দেয়া হয়। সেই গণকবরগুলো আজ অরক্ষিত ঝোপঝাড়ে পরিণত। সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের খাতায়ও তাদের নাম আছে কিনা কেউ জানে না। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় শহীদের প্রতি পরিবারের জন্য দেয়া দুই হাজার করে টাকা দেয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি । সরকারের পক্ষ থেকে আটিয়াগাঁও এলাকার শহীদ হযরত আলীর ছেলে মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীরা আমার বাবা, দাদী ও ফফুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নি:স্ব করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের চলার মতো তেমন কিছুই ছিলনা। আশপাশের গ্রামের লোকজন আমাদের চলার পথে সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’  এছাড়া শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা তাও জানেনা তারা।  একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্তার বাবুল জানান, পাক বাহিনীরা এই এলাকায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের ঘরে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যরা ৪ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে কয়েকজন বাড়ির পাশে গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থেকে কোনক্রমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষা পায়।   আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাহাতুন বেগম জানান, তখন অগ্রহায়ন মাস বাড়ির পাশেই ধানের কাজ করছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। আর গুলি করে হত্যা করে যাকে সামনে পায়। পরে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এখানে এখন ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার শহীদদের গণকবরস্থানে বধ্যভূমি নির্মাণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর সহায়তায় সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় ঘোড়াশাল পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভূইয়া। ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারেরগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বধ্যভূমি নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান এলাকাবাসী। বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়ে আজ এলাকাবাসীর দাবি হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের তালিকা প্রনয়ন, গণকবর তৈরী করে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া অরবিন্দ রায় ০১৯১৮৭৬৭৬৫৫