সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পটুয়াখালী জেলাধীন গলাচিপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ জনে শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ২৪শের ছাত্র-জনতা ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই, উপদেষ্টা ফওজুল কবীর খান চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা মিঠামইন হাওরে ৫০ একর বোরো জমিতে সমালয় চাষাবাদ অষ্টগ্রামে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনে সভাপতি জাকির হোসেন মুকুল ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঔষধ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন বিএনপির শ্রদ্ধা ও র্্যালি জামায়াতে ইসলামী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং (মহান বিজয় দিবস) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই মিলবে সুদমুক্ত বড় ঋণ; লক্ষ্মীপুরে ১০ যাত্রীবাহী বাস মাইক্রোবাসসহ আটক ১১

  • আপডেট সময় : সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৩ বার পঠিত

মোঃ জায়েদ হোসেন
কমলনগর লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ-

ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই মিলবে সর্বনিম্ন এক লাখ  থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ। এমন প্রলোভনে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্রামের শতশত নিরীহ নারী পুরুষ কিশোর কিশোরীকে। 

রোববার ( ২৪ নভেম্বর) রাতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার করইতোলা বাজারে কথিত সে সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য ঢাকায় যাত্রাকালে ৩টি যাত্রীবাহী বড় বাস এবং ৭ মাইক্রোবাসসহ প্রায় দুই শতাধিক নারী পুরুষকে আটকে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে কমলনগর থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর একটি দল। ঘটনার সাথে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়।

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে আরো বিপুল সংখ্যক গ্রামের নারী পুরুষ ঢাকার অভিমুখে ছুটে গেছে।  

ভাড়া করা যাত্রীবাহী বাস ঢাকা এক্সপ্রেসের চালক মোঃ সোহেল জানায়, আলমগীর ও সিরাজ নামে দুই ব্যক্তি  ঢাকায় যেতে তাদের বাস ভাড়া করেছিলেন। কিন্ত তারা গাড়ি থেকে সটকে পড়েন। 

ছোট শিশু কোলে নিয়ে আলেয়া নামের একনারী জানায়, ২৫ নভেম্বর ঢাকার  সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা শাহাবাগের একটি সমাবেশে যোগ দিতে লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

সেখানে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড মোঃ ইউনুসের নিকট তারা প্রস্তাব দিবেন। উক্ত টাকা থেকে তাদের মতো গ্রামের নারী পুরুষদের ১ লাখ থেকে বড় অংকের টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে বলে জানান ওই নারী। 

স্থানীয় মোরশেদ আলম নামের এক যুবক জানিয়েছে, ৫ই আগষ্টের কয়েক দিন পর থেকে একটি চক্র গ্রামের মানুষদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার নাম করে সংগঠিত করছিল। রোববার রাতে সেই চক্রের আহবানে শতশত নারী পুরুষ ঢাকায় ছুটে যাচ্ছিলেন। 

উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের গৃহবধূ ফারহানা আক্তার জানান, তিনি ১০ টাকার বিনিময়ে  ১ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। তবে এ জন্য তাকে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সমাবেশে যোগ দেয়ার পরের দিন থেকে তাদের কে ঋণ দেয়ার কথা ছিল।  তোরাবগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন আক্তার জানান, গাড়ি ভাড়া হিসেবে তিনি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার মতো এরকম প্রায় এক হাজার লোক থেকে টাকা নিয়েছে স্থানীয় সংগঠকরা। 

বাসযাত্রী নারী পুরুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি চক্র ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা নিয়েছে এক হাজার টাকা। ঋণপ্রত্যাশী ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ।

কমলনগর থানার ওসি তহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। ৩ টি বাস ও ৪ টি মাইক্রোবাস জব্দ আছে। তবে মূল হোতাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তারা ঢাকায়। মাঝে মাঝে এসে ফরম পূরণ করে চলে যায়। তারা এখানকার হতদরিদ্র মানুষদেরকে ১ হাজার টাকায় ফরম পূরণ করলে ১ লাখ টাকার চেয়ে বেশি সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে। এতে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন সমাবেশ করতে চেয়েছিল। ডিএমপি’র সঙ্গে কথা হয়েছে। কোন সমাবেশ হয়নি, হবে না। কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ তাদের সভা পন্ড হয়ে গেছে।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডি দিবস অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশাল ট্র্যজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নরসিংদীর ঘোড়াশালে আটিয়াগাঁও গ্রামে একই বাড়িতে শিশুসহ ১৮ নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের সকল ঘর-বাড়ি। নির্মম হত্যাযজ্ঞে গ্রামের শিশুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন নারী পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। এই দিনটি আসলে এলাকার মানুষ আজও আৎকে উঠে সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ৯ দিন পূর্বে দেশজুড়ে যখন কোণঠাসা পশ্চিমা হানাদার বাহিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াশালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিকামী বাঙালীর। বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানীরা ফিরে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশালের আটিয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানিরা আবুল কাসেমের বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা ৪ মাসের শিশু আয়শাসহ হত্যা করা হয় মোকছেদ আলী, মালাবক্স, শাহাজাহান, রহম আলী, আঃ হেকিম, হযরত আলী, আম্বিয়া খাতুন, মজিদা, শাহাজউদ্দিন, নেহাজউদ্দিন ও নেজু সহ প্রায় ১৮ নর-নারীকে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। এভাবে শুধুমাত্র আটিয়াগাঁও গ্রামেই ২৫ থেকে ৩০ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয় আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। হত্যাযজ্ঞের পরের দিনে তাদের অনেককেই গণকবর হিসেবে মাটি দেয়া হয়। সেই গণকবরগুলো আজ অরক্ষিত ঝোপঝাড়ে পরিণত। সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের খাতায়ও তাদের নাম আছে কিনা কেউ জানে না। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় শহীদের প্রতি পরিবারের জন্য দেয়া দুই হাজার করে টাকা দেয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি । সরকারের পক্ষ থেকে আটিয়াগাঁও এলাকার শহীদ হযরত আলীর ছেলে মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীরা আমার বাবা, দাদী ও ফফুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নি:স্ব করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের চলার মতো তেমন কিছুই ছিলনা। আশপাশের গ্রামের লোকজন আমাদের চলার পথে সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’  এছাড়া শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা তাও জানেনা তারা।  একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্তার বাবুল জানান, পাক বাহিনীরা এই এলাকায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের ঘরে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যরা ৪ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে কয়েকজন বাড়ির পাশে গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থেকে কোনক্রমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষা পায়।   আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাহাতুন বেগম জানান, তখন অগ্রহায়ন মাস বাড়ির পাশেই ধানের কাজ করছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। আর গুলি করে হত্যা করে যাকে সামনে পায়। পরে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এখানে এখন ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার শহীদদের গণকবরস্থানে বধ্যভূমি নির্মাণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর সহায়তায় সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় ঘোড়াশাল পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভূইয়া। ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারেরগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বধ্যভূমি নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান এলাকাবাসী। বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়ে আজ এলাকাবাসীর দাবি হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের তালিকা প্রনয়ন, গণকবর তৈরী করে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া অরবিন্দ রায় ০১৯১৮৭৬৭৬৫৫