ডেস্ক রিপোর্টঃ-
দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন ঘোষণা করে কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একই অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন।
অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারকে অপসারণ, মাসিক বেতন ও বোর্ড ফি ছাড়া অন্য কোনো টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা যাবে না, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না, দ্রুত কলেজে ছাত্রসংসদ গঠনসহ আটটি দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে এমন ঘোষণা দিয়ে কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার গত ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর অন্যায়, অনৈতিক আচরণ করে নানানভাবে হয়রানি করছেন। তার শক্তির প্রধান উৎসে ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার তার নিজের অফিসকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিণত করেছিল।
তার এহেন অত্যাচার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হয়রানি বেড়ে যেত। অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে গত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং একই সালের ৮ এপ্রিল রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। এতেও থেমে থাকেননি অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার। তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
পরবর্তীকালে শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত রিট পিটিশন করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং চলতি বছরের ২১ মার্চ স্থগিত আদেশ দেন আদালত।
একই সঙ্গে গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। আওয়ামী ক্ষমতার জোরে সব কিছুই হজম করে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতিতা শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
এদিকে গত জুলাই আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ উল্লেখ করে গত ১৮ জুলাই নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে আওয়ামী প্রেমকে প্রমাণিত করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিজয় হলেও আওয়ামী দোসর অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সপদে বহাল রয়েছেন। অধ্যক্ষের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার গ্রেপ্তার দাবিতে ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনশন করেন প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
অবশেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশে শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কটাক্ষ করায় অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলায় সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের অপসারণসহ ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন ঘোষণা করে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় বক্তব্য দেন- উত্তর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী বখতিয়ার খলজি, রফিকুল ইসলাম, রাতুল হাসান, জেমস হাসান, শাহারিয়ার ও সিয়াম।
উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ফেসবুকের পোস্ট বিষয়টি অনেক আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বসে আপস হয়েছে। ওই আন্দোলনে নিহতদের উদ্দেশ্যে কলেজে মিলাদ করা হয়েছিল। আবারও কেন তারা ফুঁসে উঠেছে তা জানা নেই। তবে একটি গোষ্ঠী অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করার পাঁয়তারা করছে।