সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পটুয়াখালী জেলাধীন গলাচিপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ জনে শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ২৪শের ছাত্র-জনতা ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই, উপদেষ্টা ফওজুল কবীর খান চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা মিঠামইন হাওরে ৫০ একর বোরো জমিতে সমালয় চাষাবাদ অষ্টগ্রামে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনে সভাপতি জাকির হোসেন মুকুল ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঔষধ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন বিএনপির শ্রদ্ধা ও র্্যালি জামায়াতে ইসলামী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং (মহান বিজয় দিবস) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারীদের প্রজন্ম প্রতিবন্ধী বলে স্টাটাস দেওয়ায় কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণের দাবীতে কলেজে তালা

  • আপডেট সময় : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৫ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্টঃ-

দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন ঘোষণা করে কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একই অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন।

অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারকে অপসারণ, মাসিক বেতন ও বোর্ড ফি ছাড়া অন্য কোনো টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা যাবে না, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না, দ্রুত কলেজে ছাত্রসংসদ গঠনসহ আটটি দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে এমন ঘোষণা দিয়ে কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার গত ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর অন্যায়, অনৈতিক আচরণ করে নানানভাবে হয়রানি করছেন। তার শক্তির প্রধান উৎসে ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার তার নিজের অফিসকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিণত করেছিল।

তার এহেন অত্যাচার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হয়রানি বেড়ে যেত। অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে গত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং একই সালের ৮ এপ্রিল রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। এতেও থেমে থাকেননি অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার। তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

পরবর্তীকালে শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত রিট পিটিশন করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং চলতি বছরের ২১ মার্চ স্থগিত আদেশ দেন আদালত।

একই সঙ্গে গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। আওয়ামী ক্ষমতার জোরে সব কিছুই হজম করে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন নির্যাতিতা শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।

এদিকে গত জুলাই আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ উল্লেখ করে গত ১৮ জুলাই নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে আওয়ামী প্রেমকে প্রমাণিত করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিজয় হলেও আওয়ামী দোসর অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সপদে বহাল রয়েছেন। অধ্যক্ষের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার গ্রেপ্তার দাবিতে ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনশন করেন প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।

অবশেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশে শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কটাক্ষ করায় অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলায় সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের অপসারণসহ ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন ঘোষণা করে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় বক্তব্য দেন- উত্তর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী বখতিয়ার খলজি, রফিকুল ইসলাম, রাতুল হাসান, জেমস হাসান, শাহারিয়ার ও সিয়াম।

উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ফেসবুকের পোস্ট বিষয়টি অনেক আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বসে আপস হয়েছে। ওই আন্দোলনে নিহতদের উদ্দেশ্যে কলেজে মিলাদ করা হয়েছিল। আবারও কেন তারা ফুঁসে উঠেছে তা জানা নেই। তবে একটি গোষ্ঠী অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করার পাঁয়তারা করছে।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডি দিবস অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশাল ট্র্যজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নরসিংদীর ঘোড়াশালে আটিয়াগাঁও গ্রামে একই বাড়িতে শিশুসহ ১৮ নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের সকল ঘর-বাড়ি। নির্মম হত্যাযজ্ঞে গ্রামের শিশুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন নারী পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। এই দিনটি আসলে এলাকার মানুষ আজও আৎকে উঠে সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ৯ দিন পূর্বে দেশজুড়ে যখন কোণঠাসা পশ্চিমা হানাদার বাহিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াশালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিকামী বাঙালীর। বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানীরা ফিরে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশালের আটিয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানিরা আবুল কাসেমের বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা ৪ মাসের শিশু আয়শাসহ হত্যা করা হয় মোকছেদ আলী, মালাবক্স, শাহাজাহান, রহম আলী, আঃ হেকিম, হযরত আলী, আম্বিয়া খাতুন, মজিদা, শাহাজউদ্দিন, নেহাজউদ্দিন ও নেজু সহ প্রায় ১৮ নর-নারীকে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। এভাবে শুধুমাত্র আটিয়াগাঁও গ্রামেই ২৫ থেকে ৩০ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয় আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। হত্যাযজ্ঞের পরের দিনে তাদের অনেককেই গণকবর হিসেবে মাটি দেয়া হয়। সেই গণকবরগুলো আজ অরক্ষিত ঝোপঝাড়ে পরিণত। সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের খাতায়ও তাদের নাম আছে কিনা কেউ জানে না। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় শহীদের প্রতি পরিবারের জন্য দেয়া দুই হাজার করে টাকা দেয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি । সরকারের পক্ষ থেকে আটিয়াগাঁও এলাকার শহীদ হযরত আলীর ছেলে মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীরা আমার বাবা, দাদী ও ফফুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নি:স্ব করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের চলার মতো তেমন কিছুই ছিলনা। আশপাশের গ্রামের লোকজন আমাদের চলার পথে সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’  এছাড়া শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা তাও জানেনা তারা।  একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্তার বাবুল জানান, পাক বাহিনীরা এই এলাকায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের ঘরে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যরা ৪ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে কয়েকজন বাড়ির পাশে গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থেকে কোনক্রমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষা পায়।   আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাহাতুন বেগম জানান, তখন অগ্রহায়ন মাস বাড়ির পাশেই ধানের কাজ করছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। আর গুলি করে হত্যা করে যাকে সামনে পায়। পরে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এখানে এখন ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার শহীদদের গণকবরস্থানে বধ্যভূমি নির্মাণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর সহায়তায় সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় ঘোড়াশাল পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভূইয়া। ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারেরগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বধ্যভূমি নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান এলাকাবাসী। বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়ে আজ এলাকাবাসীর দাবি হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের তালিকা প্রনয়ন, গণকবর তৈরী করে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া অরবিন্দ রায় ০১৯১৮৭৬৭৬৫৫