সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পটুয়াখালী জেলাধীন গলাচিপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ জনে শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ২৪শের ছাত্র-জনতা ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই, উপদেষ্টা ফওজুল কবীর খান চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা মিঠামইন হাওরে ৫০ একর বোরো জমিতে সমালয় চাষাবাদ অষ্টগ্রামে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনে সভাপতি জাকির হোসেন মুকুল ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঔষধ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন বিএনপির শ্রদ্ধা ও র্্যালি জামায়াতে ইসলামী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং (মহান বিজয় দিবস) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

লোহাগড়ায় সেনা সদস্যকে ফাঁসাতে ছাত্রীর কথিত অভিযোগ, ছাত্রী ও তার পরিবার নিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া

  • আপডেট সময় : রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪
  • ১০৮ বার পঠিত

নড়াইল প্রতিনিধি,

নড়াইলের লোহাগড়ায় এক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কথিত ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকা ঘুরে জানা গেছে নানা নতুন তথ্য। অভিযুক্ত সেনা সদস্যের গ্রামের লোকজন বলছেন, চাকুরীজীবি নিরাপরাধ ছেলেকে ফাঁসাতে ওই মেয়ে কল্পকাহিনী রটিয়েছে। আবার ওই ছাত্রীর গ্রামের মানুষ ও প্রতিবেশীরা বলছেন ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের মানুষদের স্বভাব-চরিত্র ভালো না। অভিযোগ উঠার পর বাংলাদেশ সোনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তিনদফায় তিনজন কর্মকর্তা পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত করে গেছেন।

ঘটনার সত্যতা জানতে শনিবার( ৮জুন) সরেজমিনে পাঁচুড়িয়া গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই সেনা সদস্যর পিতা লোহাগড়া পৌর শহরের গোপিনাথপুর গ্রামে বাড়ি করেছেন। সেখানেই তারা বসবাস করেন। তাই পাঁচুড়িয়া গ্রামে যাওয়া হয় না। অথচ রটেছে পাঁচুড়িয়া গ্রামের বাড়িতে ওই ছাত্রীকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।

কথিত ধর্ষণের ঘটনাস্থল বাড়ির ভাড়াটিয়া লাকী খানম বলেন, আমরা প্রায় আড়াই বছর এ বাড়িতে বসবাস করছি। বাকের ওরফে পিয়াস এখানে কোন মেয়েকে নিয়ে আসেনি। মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী পাঁচুড়িয়া গ্রামের আব্দুর রউফের স্ত্রী তাহেরা ও জয়নাল শেখের স্ত্রী জোহরা বেগম(৬৫) বলেন বাকের ওরফে পিয়াস একটা ভালো ছেলে । তাকে এ বাড়িতে ৩-৪ বছর যাবৎ আসতে দেখিনি। ধর্ষণের ঘটনা সাজানো। ওই গ্রামের বদিয়ার রহমান, ইকবাল হোসেন, রেজাউল করিম বলেন বাকের ওরফে পিয়াসকে কোন মেয়েকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতে দেখিনি। অযথা নিরাপরাধ ছেলেকে কলংক দেয়া হচ্ছে।

শনিবার( ৮জুন) সরেজমিনে ওই ছাত্রীর বাড়ি মাউলি গ্রামে গেলে ছাত্রীর পরিবারসহ গ্রামের নানা পেশার মানুষের সাথে কথা হয়। ওই ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আমি উপযুক্ত বিচার চাই। তিনি আরো বলেন ঘটনা তদন্ত করতে সেনাবাহিনীর দুজন ব্যাক্তি আমার বাড়িতে এসেছিলো। তারা আমাদের বক্তব্য নিয়ে চলে গেছেন। গ্রামের মানুষ আমাদের এক ঘোরে করে রেখেেেছ। আমাদের পক্ষে গ্রামের কেউ নেই। মেম্বরের কাছে বিচার চেয়েছিলাম তিনি বললেন প্রমাণ দেখাও । প্রমাণ দেখাতে পারিনি তাই তিনি বিচার করতে পারবেন না বলে তিনি জানান। গ্রামের মানুষ আমাদের সাথে অপকর্ম করতে চায়। আমরা তো রাজি হই নাই, তাই আমাদের পক্ষে কেউ নাই।

মাউলি গ্রামের অন্তত ১৫জন নারী নাম প্রকাশ না করবার শর্তে জানান, ওই ছাত্রী ও তার পরিবার ভালো না। মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে বহিরাগত ছেলেরা এসে দু-চারদিন যাবৎ বেড়াতো। আমরা ওই ছাত্রীর মায়ের কাছে জানতে চাইলে কখনো বলতো আমার ভাইয়ের ছেলে এসেছে, কখনোবা বলতো আমার ভাতিজা বেড়াতে এসেছে। এরকম করে মাঝে মাঝে অপরিচিত ছেলেরা ওই বাড়িতে রাত-দিন কাটাতো। আমরা নিষেধ করলেও মা-মেয়ে বেপরোয়া চলাফেরা বন্ধ করেনি। বরং মনে হয়েছে ওই বাড়িতে খারাপ ব্যবসা করা হয়। পরিবেশ নোংরা করা হয়েছে। তাই গ্রামের কেউ ওদের সাথে নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌর এলাকার গোপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা দলিল লেখক মোঃ জিয়াউর রহমান এর ছেলে সেনা সদস্য মোঃ বাকের ওরফে পিয়াস ওরফে বাকি বিল্লাহ গত চার বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চাকুরীর দুই বছর পর মাউলি গ্রামের আবেদ মোল্যার দশম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ের সাথে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার পরিচয় হয়। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে শুরু হয় প্রেমজ সম্পর্ক।

ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি সেনা সদস্য বাকের আমাকে বিয়ে করতে যাবার কথা বলে তার গ্রামের বাড়ি পাঁচুড়িয়ায় নিয়ে যায়। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে বাকের দরজা বন্ধ করে দেয়। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তখন বাকের আমাকে ধর্ষণ করে। ওই বাড়িতে বাকেরের বন্ধু পল্লব(প্রিয়) ছিলো। এসময় বাকের আমাকে বলে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে বিয়ে করবো। ধর্ষণের কয়েক মাস পর বিয়ে করতে বললে বাকের নানা তালবাহানা শুরু করে। বাকের সহ তার আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে সকলেই আমার সাথে দূর্ব্যবহার করে। তারা জানায়, বাকের অন্য কোথাও বিয়ে করেছে। পরে বাকের আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই ছাত্রী আরো জানান, উপায়ন্তর না পেয়ে আমি গত ২ জুন লোহাগড়া পৌরসভার গোপিনাথপুর গ্রামস্থ্য বাকেরের বাড়িতে যাই। বাকেরের মা-বাবাকে জানাই ” আপনাদের ছেলে আমার সাথে দুই বছর যাবৎ প্রেম করেছে। এমনকি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। আমি বাকেরকে বিয়ে করতে চাই।” বাকেরের বাবা-মা পুলিশকে খবর দিলে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার কথা শোনে। এরপর পুলিশ বিষয়টি লোহাগড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়াকে অবগত করে দায়িত্ব পালন করে চলে যায়। এরপর পৌর কাউন্সিলর তার নিজ বাড়ির উঠানে ছেলের বাবা ও চাচা এবং মেয়ের বাবা কে নিয়ে ঘটনার মিমাংশার জন্য বসেন। বৈঠকে কথিত ধর্ষিতা ছাত্রী বলেন, যেহেতু আমাকে নষ্ট করা হয়েছে। আমাকে বিয়ে করতে হবে। না হলে আত্মহত্যা করবো। বাকেরের বাবাসহ চাচা জাহিরুল ইসলাম তসলু বলেন, বাকেরকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা সঠিক তদন্ত দাবি করছি। পৌর কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগের তদন্ত চলছে। মাউলি ১নং ওয়ার্ডের মেম্বর মোঃ হিরাঙ্গীর শেখ জানান, ঘটনা শুনেছি। সেনাবাহিনী থেকে দুবার তদন্তে এসেছিলো। কথা বলেছি।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডি দিবস অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশাল ট্র্যজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নরসিংদীর ঘোড়াশালে আটিয়াগাঁও গ্রামে একই বাড়িতে শিশুসহ ১৮ নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের সকল ঘর-বাড়ি। নির্মম হত্যাযজ্ঞে গ্রামের শিশুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন নারী পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। এই দিনটি আসলে এলাকার মানুষ আজও আৎকে উঠে সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ৯ দিন পূর্বে দেশজুড়ে যখন কোণঠাসা পশ্চিমা হানাদার বাহিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াশালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিকামী বাঙালীর। বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানীরা ফিরে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশালের আটিয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানিরা আবুল কাসেমের বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা ৪ মাসের শিশু আয়শাসহ হত্যা করা হয় মোকছেদ আলী, মালাবক্স, শাহাজাহান, রহম আলী, আঃ হেকিম, হযরত আলী, আম্বিয়া খাতুন, মজিদা, শাহাজউদ্দিন, নেহাজউদ্দিন ও নেজু সহ প্রায় ১৮ নর-নারীকে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। এভাবে শুধুমাত্র আটিয়াগাঁও গ্রামেই ২৫ থেকে ৩০ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয় আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। হত্যাযজ্ঞের পরের দিনে তাদের অনেককেই গণকবর হিসেবে মাটি দেয়া হয়। সেই গণকবরগুলো আজ অরক্ষিত ঝোপঝাড়ে পরিণত। সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের খাতায়ও তাদের নাম আছে কিনা কেউ জানে না। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় শহীদের প্রতি পরিবারের জন্য দেয়া দুই হাজার করে টাকা দেয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি । সরকারের পক্ষ থেকে আটিয়াগাঁও এলাকার শহীদ হযরত আলীর ছেলে মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীরা আমার বাবা, দাদী ও ফফুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নি:স্ব করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের চলার মতো তেমন কিছুই ছিলনা। আশপাশের গ্রামের লোকজন আমাদের চলার পথে সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’  এছাড়া শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা তাও জানেনা তারা।  একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্তার বাবুল জানান, পাক বাহিনীরা এই এলাকায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের ঘরে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যরা ৪ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে কয়েকজন বাড়ির পাশে গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থেকে কোনক্রমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষা পায়।   আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাহাতুন বেগম জানান, তখন অগ্রহায়ন মাস বাড়ির পাশেই ধানের কাজ করছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। আর গুলি করে হত্যা করে যাকে সামনে পায়। পরে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এখানে এখন ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার শহীদদের গণকবরস্থানে বধ্যভূমি নির্মাণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর সহায়তায় সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় ঘোড়াশাল পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভূইয়া। ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারেরগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বধ্যভূমি নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান এলাকাবাসী। বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়ে আজ এলাকাবাসীর দাবি হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের তালিকা প্রনয়ন, গণকবর তৈরী করে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া অরবিন্দ রায় ০১৯১৮৭৬৭৬৫৫