নড়াইল প্রতিনিধি,
নড়াইলের লোহাগড়ায় এক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কথিত ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকা ঘুরে জানা গেছে নানা নতুন তথ্য। অভিযুক্ত সেনা সদস্যের গ্রামের লোকজন বলছেন, চাকুরীজীবি নিরাপরাধ ছেলেকে ফাঁসাতে ওই মেয়ে কল্পকাহিনী রটিয়েছে। আবার ওই ছাত্রীর গ্রামের মানুষ ও প্রতিবেশীরা বলছেন ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের মানুষদের স্বভাব-চরিত্র ভালো না। অভিযোগ উঠার পর বাংলাদেশ সোনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তিনদফায় তিনজন কর্মকর্তা পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত করে গেছেন।
ঘটনার সত্যতা জানতে শনিবার( ৮জুন) সরেজমিনে পাঁচুড়িয়া গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই সেনা সদস্যর পিতা লোহাগড়া পৌর শহরের গোপিনাথপুর গ্রামে বাড়ি করেছেন। সেখানেই তারা বসবাস করেন। তাই পাঁচুড়িয়া গ্রামে যাওয়া হয় না। অথচ রটেছে পাঁচুড়িয়া গ্রামের বাড়িতে ওই ছাত্রীকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।
কথিত ধর্ষণের ঘটনাস্থল বাড়ির ভাড়াটিয়া লাকী খানম বলেন, আমরা প্রায় আড়াই বছর এ বাড়িতে বসবাস করছি। বাকের ওরফে পিয়াস এখানে কোন মেয়েকে নিয়ে আসেনি। মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী পাঁচুড়িয়া গ্রামের আব্দুর রউফের স্ত্রী তাহেরা ও জয়নাল শেখের স্ত্রী জোহরা বেগম(৬৫) বলেন বাকের ওরফে পিয়াস একটা ভালো ছেলে । তাকে এ বাড়িতে ৩-৪ বছর যাবৎ আসতে দেখিনি। ধর্ষণের ঘটনা সাজানো। ওই গ্রামের বদিয়ার রহমান, ইকবাল হোসেন, রেজাউল করিম বলেন বাকের ওরফে পিয়াসকে কোন মেয়েকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতে দেখিনি। অযথা নিরাপরাধ ছেলেকে কলংক দেয়া হচ্ছে।
শনিবার( ৮জুন) সরেজমিনে ওই ছাত্রীর বাড়ি মাউলি গ্রামে গেলে ছাত্রীর পরিবারসহ গ্রামের নানা পেশার মানুষের সাথে কথা হয়। ওই ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আমি উপযুক্ত বিচার চাই। তিনি আরো বলেন ঘটনা তদন্ত করতে সেনাবাহিনীর দুজন ব্যাক্তি আমার বাড়িতে এসেছিলো। তারা আমাদের বক্তব্য নিয়ে চলে গেছেন। গ্রামের মানুষ আমাদের এক ঘোরে করে রেখেেেছ। আমাদের পক্ষে গ্রামের কেউ নেই। মেম্বরের কাছে বিচার চেয়েছিলাম তিনি বললেন প্রমাণ দেখাও । প্রমাণ দেখাতে পারিনি তাই তিনি বিচার করতে পারবেন না বলে তিনি জানান। গ্রামের মানুষ আমাদের সাথে অপকর্ম করতে চায়। আমরা তো রাজি হই নাই, তাই আমাদের পক্ষে কেউ নাই।
মাউলি গ্রামের অন্তত ১৫জন নারী নাম প্রকাশ না করবার শর্তে জানান, ওই ছাত্রী ও তার পরিবার ভালো না। মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে বহিরাগত ছেলেরা এসে দু-চারদিন যাবৎ বেড়াতো। আমরা ওই ছাত্রীর মায়ের কাছে জানতে চাইলে কখনো বলতো আমার ভাইয়ের ছেলে এসেছে, কখনোবা বলতো আমার ভাতিজা বেড়াতে এসেছে। এরকম করে মাঝে মাঝে অপরিচিত ছেলেরা ওই বাড়িতে রাত-দিন কাটাতো। আমরা নিষেধ করলেও মা-মেয়ে বেপরোয়া চলাফেরা বন্ধ করেনি। বরং মনে হয়েছে ওই বাড়িতে খারাপ ব্যবসা করা হয়। পরিবেশ নোংরা করা হয়েছে। তাই গ্রামের কেউ ওদের সাথে নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌর এলাকার গোপিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা দলিল লেখক মোঃ জিয়াউর রহমান এর ছেলে সেনা সদস্য মোঃ বাকের ওরফে পিয়াস ওরফে বাকি বিল্লাহ গত চার বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চাকুরীর দুই বছর পর মাউলি গ্রামের আবেদ মোল্যার দশম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ের সাথে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার পরিচয় হয়। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে শুরু হয় প্রেমজ সম্পর্ক।
ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, চলতি বছর ২৭ জানুয়ারি সেনা সদস্য বাকের আমাকে বিয়ে করতে যাবার কথা বলে তার গ্রামের বাড়ি পাঁচুড়িয়ায় নিয়ে যায়। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে বাকের দরজা বন্ধ করে দেয়। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তখন বাকের আমাকে ধর্ষণ করে। ওই বাড়িতে বাকেরের বন্ধু পল্লব(প্রিয়) ছিলো। এসময় বাকের আমাকে বলে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে বিয়ে করবো। ধর্ষণের কয়েক মাস পর বিয়ে করতে বললে বাকের নানা তালবাহানা শুরু করে। বাকের সহ তার আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে সকলেই আমার সাথে দূর্ব্যবহার করে। তারা জানায়, বাকের অন্য কোথাও বিয়ে করেছে। পরে বাকের আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই ছাত্রী আরো জানান, উপায়ন্তর না পেয়ে আমি গত ২ জুন লোহাগড়া পৌরসভার গোপিনাথপুর গ্রামস্থ্য বাকেরের বাড়িতে যাই। বাকেরের মা-বাবাকে জানাই ” আপনাদের ছেলে আমার সাথে দুই বছর যাবৎ প্রেম করেছে। এমনকি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। আমি বাকেরকে বিয়ে করতে চাই।” বাকেরের বাবা-মা পুলিশকে খবর দিলে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার কথা শোনে। এরপর পুলিশ বিষয়টি লোহাগড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়াকে অবগত করে দায়িত্ব পালন করে চলে যায়। এরপর পৌর কাউন্সিলর তার নিজ বাড়ির উঠানে ছেলের বাবা ও চাচা এবং মেয়ের বাবা কে নিয়ে ঘটনার মিমাংশার জন্য বসেন। বৈঠকে কথিত ধর্ষিতা ছাত্রী বলেন, যেহেতু আমাকে নষ্ট করা হয়েছে। আমাকে বিয়ে করতে হবে। না হলে আত্মহত্যা করবো। বাকেরের বাবাসহ চাচা জাহিরুল ইসলাম তসলু বলেন, বাকেরকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা সঠিক তদন্ত দাবি করছি। পৌর কাউন্সিলর মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগের তদন্ত চলছে। মাউলি ১নং ওয়ার্ডের মেম্বর মোঃ হিরাঙ্গীর শেখ জানান, ঘটনা শুনেছি। সেনাবাহিনী থেকে দুবার তদন্তে এসেছিলো। কথা বলেছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম রহমান
ঠিকানা : গুলজান সিটি,লবনচরা,খুলনা