মোঃ তৌহিদুল ইসলাম,
কলাপাড়া- মহিপুর, প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে যেতে পারেনি পটুয়াখালীর উপকূলের সহস্রাধিক মাছ ধরা ট্রলার। উত্তর বঙ্গোপসাগরসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় তারা যেতে পারেননি। যেসব ট্রলার আগেভাগে যাত্রা শুরু করেছিল তারাও বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে ফিরে এসেছে। এসব মাছ ধরা ট্রলার এখন নোঙর করে আছে মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের শিববাড়িয়া নদিতে। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সাগরে যেতে না পারায় এসব ট্রলারের অর্ধলক্ষাধিক জেলে অপেক্ষা করছেন অনুকূল আবহাওয়ার। মৌসুমের শুরুতে ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্র যাত্রার প্রাক্কালে এমন হোঁচটে হতাশা বিরাজ করছে এসব জেলে এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে। এদিকে সাগর মোহনার অন্ধারমানিক, রাবনাবাদ, বুড়া গৌড়াঙ্গ, তেঁতুলিয়া, ডিগ্রী নদীতে জেলেদের জালে খুব কম ইলিশ পড়ছে। তবে আকারে ছোট
এসব মাছের দামও অনেক বেশি, যা সাধারণ ক্রেতাদের সামর্থ্যের বাইরে। জেলেসহ ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত নদী কিংবা সাগরে ইলিশ পাওয়া গেলেও জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসকে ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু চিংড়িসহ সামুদ্রিক প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাছের প্রজননের জন্য মৌসুমের শুরুতেই ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন, মা ইলিশের নির্বিঘ্ন প্রজননের জন্য ৮ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২দিনসহ মোট ৮৭ দিন জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়। এরপরে জাটকা সংরক্ষণের জন্য ছয় মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। রয়েছে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব। ফলে বছরের অর্ধেকটা সময় জেলেদের ঘাটে বসে কাটাতে হয়।
আলীপুর ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সাবেক সভাপতি নুরু মাঝি বলেন উপকূলের জেলেরা সাধারণত ইলিশ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে। আয় থেকে দাদনসহ দায়দেনা শোধ করে পরিবারের জন্য কিছু সঞ্চয় করব। কিন্তু ৬৫ দিনের অবরোধসহ আবহাওয়ার বৈরী আচরণ আমাদের দিন দিন দায়দেনাগ্রস্ত করে রাখছে।
মহিপুর মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা বলেন, গত বছর ইলিশের আকালের ফলে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকসহ এনজিওতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। জেলেরাও গত বছরের দাদন শোধ না করতে পারলেও সাগরে যাওয়ার জন্য নতুন করে দাদন নিয়েছেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সব ট্রলার ঘাটে নোঙর করা। মৌসুমের শুরুতে ৬৫ দিনের অবরোধের সময়সীমা পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আলীপুর-কুয়াকাটা ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও যদি এমন হয়, অনেক জেলেসহ ব্যবসায়ীরা অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়তে পারেন। এতে এ খাতের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে।