সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পটুয়াখালী জেলাধীন গলাচিপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ব্রয়লার বিস্ফোরণে কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ জনে শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ২৪শের ছাত্র-জনতা ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই, উপদেষ্টা ফওজুল কবীর খান চরের হোগলা পাতার দড়িতে স্বপ্ন বোনেন নারীরা মিঠামইন হাওরে ৫০ একর বোরো জমিতে সমালয় চাষাবাদ অষ্টগ্রামে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনে সভাপতি জাকির হোসেন মুকুল ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঔষধ প্রশাসনের মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি ফলকে চরফ্যাশন বিএনপির শ্রদ্ধা ও র্্যালি জামায়াতে ইসলামী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং (মহান বিজয় দিবস) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৭ বার পঠিত

বিজয় কর রতন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:-

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ, ময়মনসিংহ, পার্টনার, রাজস্ব ও অনাবাদি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা। তার বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পাওয়ার পর মঙ্গলবার এক সরকারী আদেশে তাকে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় বদলী করা হয়। জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বিল ভাউচার, কোথাও কোথাও নামমাত্র বাস্তবায়ন, কোথাও আবার কৃষকের ফসলি জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রদর্শনী দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে এক কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি কর্মকর্তার দাবি, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সব উপকরণ বিতরণ করেছেন তিনি। যদিও তার এমন দাবি নাকচ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, কোনো প্রদর্শনীর বরাদ্দের পরিমাণ জানেন না তারা। অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার নাম সুমন কুমার সাহা, যিনি ২০২৩ সালের ১৭ মে থেকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় কর্মরত। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উপজেলার পাঁচটি প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। বেশ কিছু প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন/বোরো ধানের প্রদর্শনী, বীজ গ্রাম প্রদর্শনী, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী, পার্টনার প্রকল্প, বসতবাড়িতে সবজি চাষ ও একক ফল বাগান, মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী ও গ্রুপ গঠন। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ফ্রিপ প্রকল্পের রোপা আমন বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী করেন তাড়াইলের বাঁশাটি গ্রামের কামরুল ইসলাম। এর বিপরীতে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৩৩ শতক জমির জন্য পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পান। এসব উপকরণের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য এক হাজার টাকা। ওই কৃষক জানান, তার মতো এমন শত শত কৃষককে এ পরিমাণ সামগ্রীই দেয়া হয়। অথচ তার অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় ১০ হাজার টাকার উপকরণ। ফ্রিপ প্রকল্পের অধীনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৪০৬টি প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে তাড়াইল উপজেলায়। এগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ টাকা। এ প্রকল্পের অর্ধেকেরও বেশি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহার বিরুদ্ধে। কামরুলের মতো আরেক কৃষক ঘোষপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম। রাজস্ব খাতের অর্থায়নে একটি বোরো ধানের প্রদর্শনী করেন তিনি। এ কৃষক উপকরণ হিসেবে পাঁচ কেজি বীজ ধান, ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি এমওপি, ১০ কেজি টিএসপি সার ও একটি সাইনবোর্ড পান। এসব উপকরণের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য এক হাজার টাকা। রফিক বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে যেগুলো দেয়, এতে আমাদের কিছুই হয় না। কৃষি অফিসের প্রদর্শনী করে আমাদের নিজেদের হাত থেকে আরও অনেক খরচ হয়।’ তাড়াইল উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বোরো ধান, আউশ, আমন ও সরিষার ১০০টি প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে। রাজস্ব খাতের এসব প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ টাকা। ১০০ প্রদর্শনীর মধ্যে প্রায় ৫০টি বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এডিবির অর্থায়নে ফ্রিপ প্রকল্পের বীজ গ্রামের প্রদর্শনী করেন তাড়াইল উপজেলার আড়াইউড়া গ্রামের শামীম, কাইয়ুম, শফিক, বাদল ও কামরুল। প্রদর্শনী এলাকার জমির পরিমাণ পাঁচ একর দেখানো হলেও তা এক থেকে দেড় একর। সাইনবোর্ডে ধানের জাত বিনা-১৭ লেখা থাকলেও খানিকটা জায়গা ছাড়া বাকি জমিগুলো অন্যান্য কৃষকের। তারা সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ধানের চাষ করেন। বীজ গ্রামের নির্দেশনার কোনো কিছুই মানা হয়নি প্রদর্শনীতে। মূলত প্রদর্শনীতে নাম থাকা কৃষকদের কিছু বীজ, সার, ড্রাম দিয়ে বীজ গ্রাম প্রদর্শনী বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। কৃষকদের ভাষ্য, তারা সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার উপকরণ পান। অথচ এ প্রদর্শনীর ব্যয় ধরা হয় দেড় লাখ টাকা। কৃষকদের মধ্যে শামীমের নামে ময়মনসিংহ প্রকল্পেরও একটি একক ধানের প্রদর্শনী রয়েছে। বীজ গ্রামের পশ্চিম পাশের জমিটি আবার ময়মনসিংহ প্রকল্পের প্রদর্শনী। সে জমিতে শামীম চাষাবাদ করেন। শামীমের নামে ফ্রিপ ও ময়মনসিংহ প্রকল্পের প্রদর্শনী থাকার পরও তার স্ত্রী ফরিদার নামে দেয়া হয়েছে অনাবাদি প্রকল্পের একটি সবজি বাগান প্রদর্শনী। শামীম-ফরিদা দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানায়, বরাদ্দকৃত অর্থ বা উপকরণের তেমন কিছুই পাননি তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, একই পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন প্রদর্শনী বরাদ্দ দিয়ে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম করেন কৃষি কর্মকর্তা। তাড়াইল উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ প্রকল্পের দুটি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে, যার একটি পান জাওয়ার ইউনিয়নের বেলংকা গ্রামের আবদুল হেকিম। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবেমাত্র ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তবে সেখানে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তা ছাড়া ভার্মী কম্পোস্ট স্থাপনের যেসব নির্দেশনা আছে, সেগুলোও মানা হয়নি। মোবাইল ফোনে কথা হলে আবদুল হেকিম জানান, ছয় মাস ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থান করছেন তিনি। কিছুদিন আগে ঘর নির্মাণের সময় বাড়িতে এসেছিলেন। আবার ১৫ দিন পর এসে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করবেন তিনি। কৃষি অফিস থেকে কী পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’ যে ঘরটি পেয়েছেন তাতে কী পরিমাণ খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘরটি করতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা তার। এ কৃষকের প্রদর্শনীতে ব্যয় ধরা ছিল দুই লাখ টাকা। এর বিপরীতে একটি শেড তৈরি করা হয়। বাকি অর্থ ব্যয় করেননি কৃষি কর্মকর্তা। দুটি ভার্মি কম্পোস্টের অপরটি পান সেকান্দরনগর গ্রামের বাসিন্দা রানা মিয়া। মোটামুটি সব প্রকল্পেরই একটি করে প্রদর্শনী পান তিনি। এর মধ্যে ফ্রিপ প্রকল্পের একটি ভার্মি কম্পোস্ট ও বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনী, ময়মনসিংহ প্রকল্পের একটি ভার্মি কম্পোস্ট, অনাবাদি প্রকল্পের একটি সবজি বাগান রয়েছে তার বাড়িতে। রানা জানান, সার উৎপাদনের জন্য ঘর নির্মাণ করে তাকে কিছু কেঁচো দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। এর বাইরে আর কিছুই জানেন না তিনি। এ কৃষকের প্রকল্পের জায়গাতে ঘর পাওয়া গেলেও সেখানে কেঁচো উৎপাদন শুরুই হয়নি। রানা মিয়ার দাবি, তাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ জানা নেই বলে দাবি করেন এ কৃষক। প্রকল্পের প্রতিটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনীতে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কৃষকেরা তার অর্ধেকও পাননি। দুই কৃষকের বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনীর ঘরের কাজ সবে শেষ করা হলেও সাইনবোর্ডে স্থাপনের তারিখ দেয়া আছে চলতি বছরের ৩০ জুন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, এ দুটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী স্থাপন না করে আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছিলেন কৃষি কর্মকর্তা, কিন্তু উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হলে তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন করেন তিনি। কৃষি অফিসের এ কর্মকর্তা আরও জানান, একই অর্থবছরে ময়মনসিংহ প্রকল্পের আরও ছয়টি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনীর বরাদ্দ আসে তাড়াইল উপজেলায়। এগুলোরও বেশির ভাগ নামমাত্র বাস্তবায়ন করার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তাড়াইলের নন্দীপুর গ্রামের মাসুদা বেগম, নায়না, রিনা, শিবলী আর জাহানারা বেগম মিলে করেন কমিউনিটি বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি প্রদর্শনী।

তারা জানান, প্রত্যেককে পাঁচ কেজি করে বীজ, পাঁচ কেজি করে ইউরিয়া সার, দুটি করে ড্রাম আর দুটি কীটনাশকের বোতল ছাড়া কিছুই দেয়া হয়নি। তারা যেগুলো পেয়েছেন, সেগুলোর বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। অথচ তাদের অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় ৫০ হাজার টাকা।

তাদের মধ্যে জাহানারা বেগমের নামে একটি রোপা আমন বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী রয়েছে। সে প্রকল্পে একটি সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই পাননি জাহানারা।

শুধু তাড়াইল উপজেলাতেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আটটি পার্টনার ফিল্ড স্কুলের জন্য আট লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। সেগুলোর বেশির ভাগ নামমাত্র বাস্তবায়নের পাশাপাশি কৃষকদের খাবার ও নাশতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বাড়ির পাশে এক খণ্ড জমিতে অনাবাদি প্রকল্পের অধীনে মাচায় সবজি চাষ করেন তালজাঙ্গা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামের ফরিদা বেগম। তার বাগানে টাঙানো ছিল কৃষি অফিসের সাইনবোর্ড।

ফরিদার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

এ কিষাণী জানান, একটি সাইনবোর্ড, চারটি ফট (ফেরোমন ট্র্যাপ) আর কিছু কীটনাশক পেয়েছেন। এ ছাড়া বাগানের সবকিছুই তার নিজস্ব খরচে করা।

তার অভিযোগ, হাঁস-মুরগি বাগানের অনেক কিছু নষ্ট করে ফেলেছে। একটি নেট আবদার করেও পাননি। এমন পরিস্থিতিতে নিজের খরচে বাঁশ, নেট, মাচা তৈরি করেছেন এ নারী। অথচ তার অনূকূলে কৃষি অফিসের স্টক রেজিস্টারে বীজ ও চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার বরাদ্দ ও পরিবহন খরচ দেখানো হয়েছে।

একই ইউনিয়নের বাঁশাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর ধরে রাস্তার পাশের একটি জমিতে লাউ, কুমড়া চাষবাদ করেন। বছরখানেক আগে জমিটিতে কুমড়া লাগিয়েছিলেন। কুমড়া শেষ করে এখন চাষ করেছেন লাউ।

তিনি জানান, কয়েক দিন আগে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসে তাকে বললেন, ‘আপনাকে একটা সাইনবোর্ড দিই।’ তিনিও তার কথায় রাজি হলেন।

সাইফুল জানান, সাইনবোর্ড লাগিয়ে তিনি পড়েন বিপদে। সারাক্ষণ লোকজন তাকে কী পেয়েছেন, তা জিজ্ঞাসা করেন।

ফরিদার মতো সাইফুলও ময়মনসিংহ প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড আর চারটি ফেরোমন ট্র্যাপ ছাড়া আর কিছুই পাননি। তার অনূকূলেও কৃষি অফিসের স্টক রেজিস্টারে বীজ ও চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার, পরিবহন খরচ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

ফ্রিপ প্রকল্পের একক ফল বাগানের প্রদর্শনী করেন দড়ি জাহাঙ্গীরপুর এলাকার রহিমা আক্তার। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার স্বামী আবুল খায়েরের সঙ্গে।

খায়ের জানান, এ প্রদর্শনীতে ৪০টি আমের চারা, কিছু সার আর অল্প কিছু কীটনাশক পান। তার অনূকুলে ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি সব মিলিয়ে পান ৪০টি আমের চারাসহ সাড়ে ৪ হাজার টাকার উপকরণ।

প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ জানা ছিল না এ কৃষকের।

বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী করেন ঘোষপাড়া এলাকার শামসুল আলম রানা। কৃষি অফিস থেকে তার নামে ৪৪ হাজার টাকার উপকরণ বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি পান ৫ কেজি আদা আর ২০০ সাদা বস্তা।

তার অভিযোগ, কৃষি অফিস থেকে আদার যেসব বীজ পান, সেগুলো পচা। আর বস্তাগুলো ছেঁড়া। পরে নিজ উদ্যোগে সবকিছু কিনে বস্তায় আদা চাষ করেন তিনি।

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্যাটার্নভিত্তিক একক প্রদর্শনী করেন বেলংকা গ্রামের জিয়াউর রহমান।

তিনি এ প্রদর্শনীতে পান পাঁচ কেজি বীজ ধান, এক বস্তা ডিপ সার, ১০ কেজি পটাশ আর ১৫ কেজি জৈব সার।

এ কৃষকের ভাষ্য, প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ জানা নেই তার। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী স্বাক্ষর করেন তিনি।

প্রকল্পটিতে প্রথমে ধানের প্রদর্শনী শেষে একই জমিতে একটি সরিষা এবং একটি ধানের প্রদর্শনী পাবেন তিনি। অর্থাৎ পরপর তিনটি প্রদর্শনী থাকবে তার নামে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের ৫০টি প্রদর্শনীতে সাত লাখ ৩১ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এগুলোরও কয়েকটি নামমাত্র বাস্তবায়ন করে বাকি অর্থ নিজের কাছে রেখে দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ গঠনেও বরাদ্দের টাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা সুমন সাহার বিরুদ্ধে।

বেশ কয়েকজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, এখানে প্রতিটি গ্রুপ গঠনে পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের বিকাশ নম্বরে ৪৫০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ৩০ জন সদস্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ পুরুষ কৃষক ও ১০ নারী কৃষক।

চলতি অর্থবছরে ৬৩টি গ্রুপ গঠনে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এখান থেকেও প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকা তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গ্রুপ গঠন প্রকল্পে ১ হাজার ৮৯০ জন কৃষকের খাতা, কলম ও নাশতার জন্য বরাদ্দ ছিল।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন সাহার ওপর ক্ষুব্ধ ঘোষপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল গাফফার।

বাবার আমল থেকে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ও নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী দাবি করা এ কৃষকের অভিযোগ, ‘যারা নিজেরা জমি চাষাবাদ করেন না, চাষাবাদ কীভাবে করতে হয়, সেটাও জানেন না, সারা দিন প্যান্ট পরে ঘোরাফেরা করে, তারাই প্রদর্শনী পায়। অথচ সারা জীবনেও কৃষির কোনো প্রদর্শনী পাইনি।

‘নিজ খরচে যেগুলো চাষাবাদ করি, সেগুলোতে কোনো সমস্যা হলে কৃষি কর্মকর্তাদের ডেকেও পাই না।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দামিহা এলাকার এক কৃষকের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও অফিসের সঙ্গে যাদের নিয়মিত যোগাযোগ, ঘুরেফিরে সব প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ তারাই পেয়ে থাকেন।

আবদুল গাফফারের মতো তারও অভিযোগ, প্রকৃতপক্ষে যারা কৃষক এবং কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের কারও খোঁজখবরও নেন না কর্মকর্তারা, কিন্তু যারা নিয়মিত অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেন, প্রদর্শনী পান তারাই।

তিনি বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও আরেক সমস্যা।’

কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পরবর্তীতে (পরবর্তী সময়ে) আর কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

বরাদ্দের পরিমাণ জানেন না, দাবি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলুফা আক্তার জানান, প্রথমে কৃষক নির্বাচন করে স্লিপ দিয়ে তাকে উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে স্টক রেজিস্টারে স্বাক্ষর রেখে কৃষকের নামে বরাদ্দকৃত সব উপকরণ বুঝিয়ে দেয়া হয়।

দিলুফার ভাষ্য, কোন কৃষকের বরাদ্দের পরিমাণ কত, তা জানেন না তিনি। যা করার সবকিছু উপজেলা অফিস থেকেই সমন্বয় করা হয়।

একই বক্তব্য আরেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মিলনের।

তিনি জানান, তারা শুধু কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠান। এর বাইরে কোনোকিছুতে তাদের হাতে নেই।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের সর্বজ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম। বিগত ৩৫ বছর ধরে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এখন তার অবসরে যাওয়ার পালা।

এ কর্মকর্তার দাবি, তিনি জানেন না কোন প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ কত।

তার ভাষ্য, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাদের সেটা জানান না। জানতে চাওয়ার সুযোগও নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ, ময়মনসিংহ, পার্টনার, রাজস্ব ও অনাবাদি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা।

কীভাবে আত্মসাৎ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মোট প্রদর্শনীর প্রায় অর্ধেকের মতো বাস্তবায়ন করেননি সুমন। যেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন, সেগুলোতে নামেমাত্র কিছু উপকরণ দিয়ে কৃষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং কৃষকদের যেখানে স্বাক্ষর নেয়া হয়, সেই রেজিস্টার খাতাটি মূলত ফাঁকা থাকে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা সই করার পর অফিস সহকারী দিয়ে সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ লিখে নেন কৃষি কর্মকর্তা। এর ফলে কোন খাতে বা কোন প্রদর্শনীতে কৃষকের অনূকূলে বরাদ্দের পরিমাণ কী, তা জানার সুযোগ থাকে না।

এ কর্মকর্তার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় স্টক রেজিস্টার দেখে।

প্রকল্পে অনিয়মের সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘কৃষক শনাক্ত করা থেকে শুরু করে সকল কিছু বাস্তবায়ন করেন উপ-সহকারী কর্মকর্তারা। যদি কোনো উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিয়ম করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই সবকিছু বাস্তবায়ন করা হয়। তারা সকল মালামাল বুঝে নিয়ে স্টক রেজিস্টারে সই করে থাকেন।’

মালামাল বুঝে নেয়ার আগে ফাঁকা খাতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সই নেয়ার বিধান আছে কি না, জানতে চাইলে সুমন চুপসে যান। এরপর একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এমনটার সুযোগ নেই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই কর্মকর্তার (সুমন সাহা) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তাকে শোকজ করা হয়েছে। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

‘তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে তার অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
এই জাতীয় আরও খবর

ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডি দিবস অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশাল ট্র্যজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নরসিংদীর ঘোড়াশালে আটিয়াগাঁও গ্রামে একই বাড়িতে শিশুসহ ১৮ নর-নারীকে হত্যা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের সকল ঘর-বাড়ি। নির্মম হত্যাযজ্ঞে গ্রামের শিশুসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন নারী পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানীরা। এই দিনটি আসলে এলাকার মানুষ আজও আৎকে উঠে সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ৯ দিন পূর্বে দেশজুড়ে যখন কোণঠাসা পশ্চিমা হানাদার বাহিনী। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াশালে কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিকামী বাঙালীর। বিজয়ের কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানীরা ফিরে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর ঘোড়াশালের আটিয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানিরা আবুল কাসেমের বাড়িতে হত্যাকাণ্ড চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা ৪ মাসের শিশু আয়শাসহ হত্যা করা হয় মোকছেদ আলী, মালাবক্স, শাহাজাহান, রহম আলী, আঃ হেকিম, হযরত আলী, আম্বিয়া খাতুন, মজিদা, শাহাজউদ্দিন, নেহাজউদ্দিন ও নেজু সহ প্রায় ১৮ নর-নারীকে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। এভাবে শুধুমাত্র আটিয়াগাঁও গ্রামেই ২৫ থেকে ৩০ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয় আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন। হত্যাযজ্ঞের পরের দিনে তাদের অনেককেই গণকবর হিসেবে মাটি দেয়া হয়। সেই গণকবরগুলো আজ অরক্ষিত ঝোপঝাড়ে পরিণত। সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন উদ্যোগ। শহীদ পরিবারের খাতায়ও তাদের নাম আছে কিনা কেউ জানে না। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সহায়তায় শহীদের প্রতি পরিবারের জন্য দেয়া দুই হাজার করে টাকা দেয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি । সরকারের পক্ষ থেকে আটিয়াগাঁও এলাকার শহীদ হযরত আলীর ছেলে মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীরা আমার বাবা, দাদী ও ফফুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নি:স্ব করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের চলার মতো তেমন কিছুই ছিলনা। আশপাশের গ্রামের লোকজন আমাদের চলার পথে সহায়তা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি।’  এছাড়া শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম আছে কিনা তাও জানেনা তারা।  একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্তার বাবুল জানান, পাক বাহিনীরা এই এলাকায় প্রবেশ করে প্রথমেই আমাদের ঘরে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। পাক বাহিনীর সদস্যরা ৪ মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে কয়েকজন বাড়ির পাশে গর্ত করে তাতে লুকিয়ে থেকে কোনক্রমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থেকে রক্ষা পায়।   আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাহাতুন বেগম জানান, তখন অগ্রহায়ন মাস বাড়ির পাশেই ধানের কাজ করছিলেন। এমন সময় পাক বাহিনীর সদস্যরা এসে বাড়িঘরে আগুন দেয়। আর গুলি করে হত্যা করে যাকে সামনে পায়। পরে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এখানে এখন ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এলাকার শহীদদের গণকবরস্থানে বধ্যভূমি নির্মাণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর সহায়তায় সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় ঘোড়াশাল পৌরসভা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার ও সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভূইয়া। ঘোড়াশাল ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারেরগুলোর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বধ্যভূমি নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান এলাকাবাসী। বিজয়ের ৫৩ বছর পেরিয়ে আজ এলাকাবাসীর দাবি হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের তালিকা প্রনয়ন, গণকবর তৈরী করে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া অরবিন্দ রায় ০১৯১৮৭৬৭৬৫৫